বিনোদন
24 Bangladesh
১৭ জুলাই, ২০২৫ | 8:19 AM
রুপালি পর্দার পরিচিত মুখ সোনাক্ষী সিনহা এবার আসছেন একেবারে ভিন্ন রূপে– এক রহস্যময়ী নারীর ভূমিকায়, যাঁর জীবনের গভীরে লুকিয়ে আছে অতীতের ভয়, অপার ব্যথা এবং এক অজানা অন্ধকার। এই ভূমিকায় অভিনয় করছেন সুপারন্যাচারাল থ্রিলার সিনেমা ‘নিকিতা রয়’-এ, যা আগামীকাল, ১৮ জুলাই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে।
এই সিনেমায় সোনাক্ষীর চরিত্র কল্পনার হলেও, ভয়ের অভিজ্ঞতা তার বাস্তব জীবনেও রয়েছে। সম্প্রতি একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি কখনও ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু সেই একটি রাত আমার বিশ্বাসকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল।’
সোনাক্ষী বলেন, ‘রাতের বেলা আধঘুম-আধজাগা অবস্থায় হঠাৎ আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। একটা চাপ অনুভব করি। কারও উপস্থিতি টের পাই, কিন্তু চোখ খুলতে পারছিলাম না, নড়তেও পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, কোনো অশরীরী সত্তা আমাকে আটকে রেখেছে। সে রাতটা ছিল ভয়াবহ।’
এই অভিজ্ঞতা তাঁর মনে আজও গভীর দাগ কেটে আছে। ঠিক তখনই তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আবার কেউ আসে, স্বপ্নে এসো– সরাসরি নয়।’ অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন ‘নিকিতা রয়’ সিনেমার প্রস্তুতির সময়েই হয়তো এই স্মৃতি ফিরে এসেছে সোনাক্ষীর মনে।
সিনেমাটির কেন্দ্রে রয়েছে নিকিতা নামে এক নারী, যাঁর জীবনে ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। অতীতের কিছু অপূরণীয় ঘটনার ভার, অপরাধবোধ এবং মানসিক বিভ্রান্তি মিলিয়ে তৈরি হয় এক ঘোরলাগা পরিস্থিতি। এক রাতে ঘটনার সূত্রপাত হয় এমনভাবে, যা তাঁকে ঠেলে দেয় এক অজানা ও অতিপ্রাকৃত জগতে। সিনেমার টানটান চিত্রনাট্যে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় এক ভয়াবহ সত্য, যা কল্পনার চেয়েও ভয়ানক। নিকিতা চরিত্রে সোনাক্ষীর পারফরম্যান্স এই সিনেমার মূল চালিকাশক্তি। প্রথমবারের মতো এমন এক চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে, যেখানে তাঁকে শুধুই ভয় পাওয়ার নয়, ভয়কে ধারণ করে এগোতে হয় এক অজানা গন্তব্যের দিকে। এই সিনেমার আরেকটি বিশেষ দিক হলো এর পরিচালনায় রয়েছেন সোনাক্ষীর ভাই কুশ সিনহা। এটিই তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি। তিনি জানিয়েছেন, সোনাক্ষীর এই চরিত্রটা অতিমানসিক ও আবেগপ্রবণ। সিনেমার জন্য নিজেকে ভেঙে গড়েছেন সোনাক্ষী। এর চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘ফোবিয়া’ ও ‘ভূত পুলিশ’খ্যাত পবন কৃপালানি, যিনি বলিউডের থ্রিলার ও হরর ঘরানার দর্শকদের কাছে নির্ভরযোগ্য নাম।
নিজের ভাইয়ের পরিচালিত প্রথম সিনেমা। একইসঙ্গে অনেক কিছুর প্রথম হয়ে সিনেমাটি এসেছে সোনাক্ষীর জীবনে। সিনেমাটি নিয়ে তাই বাড়তি আবেগ ও অনুভূতি কাজ করছে অভিনেত্রীর। এই ছবি সম্পর্কে সোনাক্ষী সিনহা বলেন, ‘দুর্দান্ত শুটিং করেছি এবং এটা আমার কাছে বিশেষ একটি কাজ; কারণ আমি ভাইয়ের প্রথম ছবিতে অভিনয় করতে পারলাম। ছবির বাকি কলাকুশলীরা আমাকে আরও ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। পরেশজির সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ এবং তাঁর সঙ্গে এক পর্দায় অভিনয় করা সম্মানের। শুটিংটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, তাই আরও বেশি মজা পেয়েছি। এই ইউনিটের সঙ্গে কাজ করে খুব ভালো লেগেছে।’
সোনাক্ষীর পাশাপাশি সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরেশ রাওয়াল, অর্জুন রামপাল এবং সুহেইল নায়ার। এর আগে সিনেমাটি ২৭ জুন মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও, সেই তারিখে কাজলের ‘মা’ ও ‘হাউসফুল ৫’-এর মতো বড় বাজেটের ছবি মুক্তি পাওয়ায় যথাযথ স্ক্রিন টাইম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিকি ভিকি ভাগনানি ফিল্মস ও নিকিতা পাই ফিল্মস লিমিটেড যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সিনেমাটি ১৮ জুলাই মুক্তি দেওয়ার। সিনেমাটি পরিবেশন করছে বাওয়েজা স্টুডিওজ, ব্লিস এন্টারটেইনমেন্ট, কার্মিক ফিল্মস ও মুভিজ পিটিই লিমিটেড।
এদিকে বিয়ের পর আমূল বদলে গেছেন সোনাক্ষী। ‘হীরামান্ডি’খ্যাত এই অভিনেত্রী সম্প্রতি কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানান, অভিনয় তাঁর জীবনের একটি অংশ মাত্র; সবকিছু নয়।
সোনাক্ষীর ক্যারিয়ারে এক সময় ছিল ‘দাবাং’ (২০১০), ‘আর… রাজকুমার (২০১৩)-এর মতো জমজমাট মাসালা সিনেমা; কিন্তু এখন তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন কনটেন্টনির্ভর ও সমালোচকদের প্রশংসিত প্রজেক্টে, যেমন ‘দাহাড়’ (২০২৩) ও ‘হীরামান্ডি: দ্য ডায়মন্ড বাজার’ (২০২৪)। এই দুই সিরিজের দ্বিতীয় সিজনের জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, “আমি এমন কাজ চাই, যা একেবারে ভিন্ন হবে এবং আমাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। সেগুলোই আমার মাপকাঠি। ভালো কাজ করার পর এমন অবস্থানে পৌঁছাই, যেখান থেকে বলতে পারি– আমি এর চেয়ে ভালো কিছু ডিজার্ভ করি।”