ধর্ম
24 Bangladesh
২৫ জুন, ২০২৫ | 12:11 PM
মসজিদে হারাম কিংবা মাতাফ থেকে যখন লাখ লাখ মুসলমান নামাজের জন্য পবিত্র কাবার দিকে মুখ করে, তখন খুব কম লোকই বুঝতে পারে যে, এর কালো গিলাফ কিসওয়ার নজরকাড়া সোনালি ক্যালিগ্রাফির মাঝে একজন মহান শিল্পীর নাম লেখা রয়েছে। তিনি হলেন- আবদুর রহিম আমিন বোখারি।
মক্কায় বসবাসকারী এই অভিজ্ঞ ক্যালিগ্রাফার ইসলামের পবিত্রতম স্থানকে ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের শব্দ দিয়ে সাজানোর ক্ষেত্রে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সৌদি আরবের বাইরে তার নাম ব্যাপকভাবে পরিচিত না হলেও, সোনার সুতোয় কাবার গিলাফে তার নাম খোদাই করে লেখা হয়েছে।
আবদুর রহিম আমিন বোখারি ১৯১৭ সালে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। আধ্যাত্মিকতা ও মুসলিম ঐতিহ্যে ভরপুর মক্কা নগরের বালক বোখারি জীবনের প্রথম দিকে আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে তা আজীবনের পেশায় পরিণত হয়।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি ১৯২৭ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজ কর্তৃক নতুন প্রতিষ্ঠিত কিসওয়া কারখানায় যোগ দেন। শুধুমাত্র কাবার গিলাফ তৈরির জন্য স্থাপিত এই কারখানায় তার শৈল্পিক যাত্রা শুরু হয়। এখানে তিনি অভিজ্ঞদের কাছে প্রশিক্ষণ নেন, ক্যালিগ্রাফি লিপির সূক্ষ্ম বক্ররেখা এবং সুশৃঙ্খল মার্জিনগুলো রপ্ত করেন।
১৯৩০ সালে তিনি প্রধান প্রযুক্তিবিদ এবং ১৯৬০ সালে কিসওয়া কারখানার উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পান। তাকে শুধু একজন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী হিসেবে নয়, বরং আচার-ব্যবহার, প্রতিভা ও নম্রতার কারণে সমীহ করা হয়।
প্রতিবছর কিসওয়া নতুন করে প্রস্তুত করা হয়। কালো রেশম কাপড়ে সোনা ও রূপার সুতোয় কোরআনে কারিমের আয়াত দিয়ে সূচিকর্ম করা হয়। এ কাজে লাগাতার কয়েক দশক বোখারি কাজ করেছেন।
সুলুস লিপিতে বিশেষজ্ঞ বোখারি কোরআনে কারিমের আয়াতের প্রতিটি শব্দ, অক্ষর ও রেখা এমনভাবে অঙ্কন করেছেন- তার নকশাগুলো এখনো মানোত্তীর্ণ। সেই রীতি আজ অবদি অনুসরণ করা হচ্ছে। বোখারির কাছে কিসওয়ায় ক্যালিগ্রাফি করা শুধু দায়িত্ব ছিলো না, ছিলো তার জন্য ইবাদত। তার ভাবনায় শুধু ছিলো, কীভাবে এখানে মানবিক সৌন্দর্য আরও গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।
আবদুর রহিম আমিন বোখারি একজন দক্ষ ক্যালিগ্রাফারের চেয়েও বেশি, তিনি ছিলেন কিসওয়া নকশার প্রাণ। লাখ লাখ হজ ও উমরাপালনকারী যে সোনালি অক্ষরগুলোটি দেখেন এবং স্পর্শ করেন তা প্রথমে ট্রেসিং পেপারে তার হাতে কালি দিয়ে লেখা হতো, পরে তার নেতৃত্বে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একটি দল সূচিকর্মের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তুলত।
বোখারির কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে ১৯৪৪ সালে। যখন বাদশাহ আবদুল আজিজ পবিত্র কাবার জন্য একটি নতুন দরজা তৈরির নির্দেশ দেন। এ সময় কাবার জন্য জন্য একটি সোনালি দরজা বানানো হয় এবং বোখারিকেই দরজায় ক্যালিগ্রাফি করতে বলা হয়।
নতুন দরজার তামা ও রূপার প্যানেলে মোটা সুলুস লিপিতে তার ক্যালিগ্রাফি অলংকরণ করা হয়েছে। কালেমা, আল্লাহতায়ালার নাম এবং কোরআনে কারিমের নির্বাচিত আয়াত কাবার দরজায় পৃষ্ঠকে অলংকৃত করেছে।
১৯৪৭ সালে স্থাপিত কাবার দরজাটি শিল্পজগতে আধ্যাত্মিক নকশার প্রতীক হয়ে ওঠে। পরে ১৯৭৯ সালে স্থাপিত বর্তমান দরজায়ও বোখারির ক্যালিগ্রাফি রয়েছে।