বৃহস্পতিবার, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / July 17, 2025
Logo
আজকের শিরোনাম:

ধর্ম

মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের ১৫ ফজিলত

Picture of the author

24 Bangladesh

২ জুলাই, ২০২৫ | 7:59 AM

Picture of the author

মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ শুধু একটি আমল নয়, এটি আল্লাহর দরবারে বরকতের দ্বার উন্মোচন ও দোয়া কবুলের অনন্য মাধ্যম। হৃদয়ের গভীর থেকে নবীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ জীবনে শান্তি, করুণা ও মর্যাদা বয়ে আনে। মুমিনের জীবনে দরুদ পাঠের এই মহিমান্বিত আমল অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।


নিচে দরুদ পাঠের ১৫টি ফজিলত বর্ণনা করা হলো—

১. আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ বলেন : ‘নিশ্চয়ই, আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ (সালাত আলান্নাবী) পাঠ করে থাকেন। হে ঈমানদাররা! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠাও এবং তাঁকে সালাম জানাও।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)

২. দরুদ পাঠ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং তার পাপ মোচন করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং তার মর্যাদা ১০ গুণ বৃদ্ধি করেন।’ (নাসাঈ, হাদিস : ১২৯৭)

৩. নবীর ওপর দরুদ পাঠ এমন একটি আমল, যা বান্দার যেকোনো দুশ্চিন্তা দূর করে এবং তার প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম হয়। উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বেশি বেশি দরুদ পাঠের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর করা হবে এবং তোমার পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)

৪. নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা তাঁর উম্মতের ওপর অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যগুলোর অন্যতম। আমরা তাঁর মাধ্যমে যে অগণিত কল্যাণ পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তাই তাঁর প্রশংসা করা ও তাঁর জন্য দোয়া করা্ল এমন কর্তব্য, যা আমাদের নিয়মিত পালন করা উচিত।

৫. দরুদ পাঠ নবীজির শাফাআত (সুপারিশ) লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ১০ বার করে রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করবে, ওই ব্যক্তি নবীজির শাফাআতের অধিকারী হবে।’ (তাবারানি : ২/২৬১) 

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে এভাবে দোয়া করবে—‘হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন তাঁকে তোমার সান্নিধ্য দান করো, তাহলে তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (আত-তারগিব, হাদিস : ১০৩৮)

৬. যখন কোনো বান্দা রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে, তখন আল্লাহ তাআলা নিজেই তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং সম্মানিত মজলিসে তাঁর প্রশংসা করেন। বান্দা যত বেশি দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রশংসা তত বেশি করবেন এবং তাকে তত বেশি মর্যাদা দান করবেন।

৭. কিয়ামতের দিন নবী (সা.)-এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ও প্রিয় হবেন সেসব মানুষ, যারা তাঁর ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী ব্যক্তি হবে সেই, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪৮৪)

৮. মুমিন বান্দার দরুদ ও সালাম সরাসরি রাসুল (সা.)-এর দরবারে পেশ করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যখন আমার ওপর সালাম পাঠায়, তখন আল্লাহ আমার রুহ আমার দিকে ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি তার সালামের জবাব দিতে পারি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪১)

আর যখন তাঁর কোনো উম্মত তাঁর ওপর সালাম পাঠায়, তখন ফেরেশতারা বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, অমুক ব্যক্তি, অমুকের পুত্র, আপনার প্রতি সালাম পাঠিয়েছেন।’ (সিলসিলাহ আস-সহিহাহ : ১৫৩০)

৯. নবীর ওপর দরুদ পাঠ দোয়া কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে নামাজে দোয়া করতে শুনলেন, কিন্তু সে নবীর ওপর দরুদ পাঠ করেনি। তখন নবীজি বলেন, ‘এই ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে।’ এরপর তিনি তাকে বা অন্য কাউকে ডেকে বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজে দোয়া করবে, সে যেন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাবলি বর্ণনা করে, তারপর আমার ওপর দরুদ পাঠ করে, এরপর সে যা চায় তা আল্লাহর কাছে চাইতে পারে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৭)

১০. নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, শান্তি ও বরকতের বর্ষণ এবং ঈমানের পরিচায়ক, বিশেষ করে যখন বান্দা এটি নিয়মিত পাঠ করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান আনো, তাঁকে সাহায্য করো, সম্মান করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর মহিমা ঘোষণা করো।’ (সুরা : ফাতাহ, আয়াত : ৯)

১১. দরুদ পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিবসে কোনো অনুশোচনা থাকবে না। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় বসে থেকে আল্লাহর নাম স্মরণ বা নবীর জন্য দরুদ পাঠ না করে চলে যায়, আল্লাহ তার ওপর পাপের বোঝা চাপাবেন। তিনি চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন, চাইলে ক্ষমা করবেন।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস : ২৭৩৮)

১২. দরুদ পাঠ একজন বান্দাকে সঠিক পথের ওপর অবিচল থাকতে সাহায্য করে। হাদিসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, কিয়ামতের দিন দরুদ তার পাঠকারীকে পুলসিরাতের ওপর স্থির দাঁড় করিয়ে দেবে এবং নিরাপদ রাখবে।

১৩. যে ব্যক্তি নবীর ওপর দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি তোমাদের ওপর দরুদ পাঠান এবং তাঁর ফেরেশতারা প্রার্থনা করেন, যাতে তিনি তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনেন। এবং তিনি মুমিনদের প্রতি করুণাময়।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৩)

১৪. দরুদ পাঠ বান্দার সুনাম ও মর্যাদা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, কারণ বান্দা যখন আল্লাহর কাছে নবীর ওপর দরুদ পাঠ করেন তখন আল্লাহ তার সেই আমল অনুযায়ী তাকে প্রতিদান দেন।

১৫. দরুদ পাঠ নবীজির প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি অন্যতম মাধ্যম। বান্দা যত বেশি তার প্রিয় নবীকে স্মরণ করবে, তার হৃদয়ে নবীর ভালোবাসা তত বেশি নিবিড় হবে। আর তাঁর প্রতি ভালোবাসার চেয়ে বেশি ফলদায়ক ভালোবাসা আর কী হতে পারে!


    জনপ্রিয়

    সর্বশেষ