মতামত
24 Bangladesh
৫ আগস্ট, ২০২৫ | 12:58 PM
৩৬ জুলাইয়ের রাজপথে যে মানুষের ঢল নেমেছিল, যদি ৩৫ জুলাইয়ের সূর্য ডোবার আগেই এই জনস্রোত রাজপথে আসত, তবে হয়তো এতগুলো ভাইকে অকালে হারাতে হতো না। বুকের পাঁজর ভাঙা দীর্ঘশ্বাস আর মায়ের শূন্য কোল দেখা লাগত না। আহা, যদি সেই জাগরণ আরেকটু আগে আসত! এই আফসোস, এই যন্ত্রণা কি কোনোদিন শেষ হবে?
ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন, সুরক্ষিত তার আশ্রয়। কিন্তু যে সন্তানেরা মাটির টানে, মুক্তির আশায় পথে নেমেছিল, তারা আর ঘরে ফিরল না। যে বাবা সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, তিনি চিরতরে হারিয়ে গেলেন। প্রতিটি মা, প্রতিটি স্ত্রী, প্রতিটি সন্তান আজও শূন্য দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে— যদি সে ফিরত! এই নীরব কান্না, এই অনন্ত অপেক্ষা কি কোনোদিন শেষ হবে? এই মাটিতে মিশে থাকা রক্তের দাগ, এই বুকফাটা আহাজারি কি কোন সময় কোনোদিন মুছতে পারবে? তাদের আত্মত্যাগ কি কেবলই এক ব্যর্থ স্মৃতির বোঝা হয়ে রবে? হায়, যদি সেদিন সব মানুষ এক হতো, তাহলে হয়তো এই বিভীষিকাময় ইতিহাস লেখা হতো না, এতগুলো স্বপ্ন অকালে ঝরে যেত না।
ছত্রিশে জুলাইয়ের আগে, ফ্যাসিবাদী সরকারের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে আমাদের ভাইয়েরা যখন পুলিশের গুলিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়ছিল, আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হচ্ছিল তাদের তাজা প্রাণ, সেদিন যদি ছত্রিশের এই গণজোয়ার দেখতে পেতাম, তাহলে হয়তো এত লাশ দেখতে হতো না। সেদিন দেখেছি স্বাধীনতার এক অপ্রতিরোধ্য আকাঙ্ক্ষা—
"গুলি কর আমাকে,
গুলি কর! মরব,
স্বাধীন করে মরব!"
সেদিন মা, খালা, চাচী, ফুফু, বোন, রিকশাচালক, ফুটপাতের দোকানি— সবাই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের চোখে ছিল কেবল একটিই দাবি:-
"হয় জীবন নে, নয় স্বাধীনতা দে!"
সেই অশ্রুভেজা চোখগুলো, সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাগুলো আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে।
সেদিন আবু সাঈদের মতো অসংখ্য বীর নির্ভয়ে বুক পেতে দিয়েছিল বুলেটের সামনে, বলেছিল,
"বুক পেতেছি, গুলি কর!"
আর পানি লাগবে পানি তৃষ্ণার্ত কণ্ঠে মুগ্ধ হয়তো কেবলই এক ফোঁটা পানি চেয়েছিল শেষ নিঃশ্বাসে।
সেদিন শুধু শ্রমিক বা রিকশাচালক নয়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাংবাদিক, ছাত্র— সব পেশার, সব স্তরের মানুষ নির্ভীক চিত্তে যুদ্ধ করেছিল। কত শত স্বপ্ন, কত শত জীবন সেদিন বিলিয়ে গিয়েছিল মুক্তির আশায়! তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ, কিন্তু স্বাধীনতা কি আজও অধরা? এই আত্মত্যাগ কি শুধুই বৃথা যাবে? এই রক্ত কি কেবল মাটির সাথে মিশে যাবে? প্রতিটি শহীদ পরিবারের হাহাকার কি কোনোদিন থামবে না? এই অসহনীয় যন্ত্রণা আর কতকাল আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে?
লেখক
ইঞ্জিনিয়ার শাকিল হোসেন