অর্থনীতি
24 Bangladesh
১৩ আগস্ট, ২০২৫ | 8:59 AM
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বিদেশে পাচার হওয়া হাজার কোটি টাকার ১১টি এবং ২০০ কোটি টাকার ১০১টি কেস চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু টাকা বাইরে চলে গেছে, তাই সেটি কথায় ফেরত আসবে না, বৈধ উপায়ে ফেরত আনতেই হবে। পাচারকারীরা বিশ্বের সেরা আইনজীবী নিয়েছে, তাই তাদের মোকাবিলায় আমাদেরও সেই মানের আইনজীবী প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার দৃশ্যমান উদ্যোগ কখন দেখা যাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু দৃশ্যমান হতে সময় লাগে। আমরা ১১টি সেনসিটিভ কেস চিহ্নিত করেছি। টাকা পাচারকারীরা ও তাদের সহযোগীরা সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি বুদ্ধিমান। যেমন, টাকা কেরানীগঞ্জ থেকে পাঠানো হলেও সেটি পঞ্চগড় ঘুরে সিলেটে যায়-এইভাবে স্তরবিন্যাস করে পাচার করা হয়। কে করেছে, কোথায় টাকা গেছে-সব চিহ্নিত হয়েছে। এখন আনার ব্যবস্থা নিতে হবে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিলেই তো তারা টাকা দিয়ে দেবে এমন নয়। এক ফিলিপাইন থেকে টাকা আনতেই জটিলতা রয়েছে, অনেক টাকা চলে যাচ্ছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের এমএলএস (মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স) হয়েছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এমএলএস মানে শুধু অনুরোধ নয়, অনেক ফরমও পূরণ করতে হয়। লন্ডনে এক ব্যক্তির দুটি-তিনটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে একজন আইনজীবী নিয়েও দৌড়াদৌড়ি চলছে। তারা বিশ্বের সেরা আইনজীবী। তাদের মোকাবিলায় আমাদেরও সেই মানের আইনজীবী প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর মাধ্যমে বিদেশি পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কিছু অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। টাকা ফেরত আনার চাইতে বড় কথা হলো সবাইকে সতর্কবাণী দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে কেউ পাচার করতে সাহস না পায়। পরবর্তী সরকার যদি মনে করে এগুলো মোকাবিলা করবে, তাহলে বর্তমানে যাদের নামে ১১টি কেস আছে, তার সঙ্গে আরো ১২ জন যোগ হতে পারে। এটি একটি শক্তিশালী বার্তা।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা আইএমএফ থেকে ১.৩ মিলিয়ন ডলার আনছি। যদি একজনের পাচার করা ৪০ হাজার কোটি টাকা ফেরত আনতে পারতাম, তাহলে আইএমএফের কাছে যেতে হতো না। দেশে অনেকের সম্পত্তি ফ্রিজ করা হয়েছে। দেশের সম্পত্তি ফেরত আনা সহজ হলেও বিদেশের সম্পদ ফেরত আনা কঠিন। শুধু দুবাই বা সিঙ্গাপুর নয়, ট্যাক্স হেভেন হিসেবে পরিচিত বারবাডোজ, এন্টিগুয়া, আইল অব ম্যানসহ বিভিন্ন স্থানে টাকা পাঠানো হয়েছে, যা শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এসব দেশের আইন-কানুনের কারণে টাকা ফেরত আনা কঠিন।
তিনি বলেন, ২০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের ১০১টি কেস চিহ্নিত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক পরিচিত ব্যক্তি থাকতে পারেন। আর হাজার কোটি টাকার ১১টি কেস রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।