Logo
শুক্রবার, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / August 15, 2025
শুক্রবার, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / August 15, 2025
আজকের শিরোনাম:

ধর্ম

নীল নদকে দেওয়া চিরকুটে যা লিখেছিলেন ওমর রা.

Picture of the author

24 Bangladesh

১৩ আগস্ট, ২০২৫ | 9:25 AM

Picture of the author

হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতকালে তার নির্দেশনায় যেসব দেশ বিজিত হয় তার অন্যতম নীল নদের দেশ মিসর। মিসর বিজয়ের নেতৃত্ব দেন হজরত আমর ইবনুল আস (রা.)। বিজয়ের পর খলিফার পরামর্শে তিনি নীল নদের পূর্ব তীরে নতুন এক নগরীর ভিত্তি স্থাপন করেন, যার নাম দেন ফুসতাত নগরী।


নগরীর নকশা প্রস্তুত, প্রতিটি গোত্রের জন্য পৃথক মহল্লা তৈরি, নগরীর কেন্দ্রস্থলে বিশালায়তন একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণসহ বিজিত অঞ্চলের মুসলমানদের সার্বিক পর্যবেক্ষণের জন্য মিসরেই অবস্থান করছিলেন আমর ইবনুল আস (রা.)।


সব কাজ সুন্দরভাবেই এগোচ্ছিল। একদিনের ঘটনা। হঠাৎ কিবতি গোত্রের এক প্রতিনিধিদল আমর ইবনুল আস (রা.)-এর দরবারে উপস্থিত হলো এবং ‘নীলবধূয়া উৎসব’ উদযাপনের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করল।


প্রাচীনকাল থেকেই নীল নদের দেশ মিসরে একটি প্রথা চলে আসছিল- তারা প্রতিবছর ‘বুনা’ মাসের ১২ তারিখে (বুনা কিবতিদের একটি মাসের নাম) মিসরের সবচেয়ে সুন্দরী রূপসী কুমারী এক মেয়েকে নববধূর সাজে সাজাত এবং উৎসর্গের জন্য তাকে নীল নদে নিক্ষেপ করত।


মিসরীয়রা নীল নদকে দেবতা জ্ঞান করত। তাদের ধারণা ছিল, বছরে একবার নীল নদের জন্য সুন্দরী কুমারী মেয়ে উৎসর্গ না করলে দেবতা অসন্তুষ্ট হবেন এবং তাদের পানি দেবেন না।


হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) তাদের কথায় অবাক হলেন। তার চেয়েও বেশি দুঃখ পেলেন এবং স্পষ্ট ভাষায় কিবতি গোত্রের লোকদের বলে দিলেন, ‘ইসলাম এই সব কুসংস্কারকে মোটেও সমর্থন করে না। সব কুসংস্কার নির্মূল করতেই ইসলামের আগমন। সুতরাং একটি মুসলিম জনপদে অন্যায়ভাবে কুমারী হত্যা আর উৎসর্গের নামে কুসংস্কার প্রথা কখনোই জারি হতে দেওয়া হবে না।’


আমর ইবনুল আস (রা.)-এর কথায় কিবতিরা খুবই মর্মাহত হলো এবং দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিজ গন্তব্যে ফিরে গেল।


ঘটনাক্রমে সত্যি সত্যি সেবার আর নীল নদে পানি এলো না। শুরু হলো আলোচনা-সমালোচনা। মিসরীয়দের একটা অংশ ছিল কৃষিজীবী। নীল নদের পানিতে তারা চাষাবাদ করত। পানি না থাকায় তারা পড়ল চরম বিপাকে। তাই কৃষকদের কেউ কেউ দেশ ছাড়ার ইচ্ছা পর্যন্ত করে ফেলল।


অবস্থা বেগতিক দেখে আমর ইবনুল আস (রা.) পুরো ঘটনা লিখে দূত মারফত পত্র পাঠালেন আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে এবং দ্রুত তার পরামর্শ প্রার্থনা করলেন।


পুরো চিঠি পড়ে হজরত ওমর (রা.) জবাবে আমর ইবনুল আস (রা.)-কে লিখে পাঠালেন, ‘আপনি কিবতিদের যা বলেছেন, যথার্থ বলেছেন। আমি একটি চিরকুট পাঠালাম নীল নদের নামে। এটি নীল নদে নিক্ষেপ করবেন।’


আদেশ মোতাবেক চিরকুটটি নীল নদে নিক্ষেপ করা হলো। আল্লাহর কী মেহেরবানি, ওই বছরই নীল নদে পানি চলে এলো এবং এই পরিমাণ পানি এলো, যা নীল নদে এর আগে কখনো আসেনি।


ঐতিহাসিকরা বলেন, হজরত ওমর (রা.) নীল নদকে লিখেছিলেন, ‘আল্লাহর বান্দা ও মুসলিমদের নেতা ওমরের পক্ষ থেকে মিসরের নীলের প্রতি- হে নীল! তুমি যদি নিজ ক্ষমতায় প্রবাহিত হও, তাহলে ঠিক আছে, আর প্রবাহিত হয়ো না। কিন্তু তোমার প্রবাহের উৎস যদি হয়ে থাকে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালার হাতে, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করে দেন।’ -আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৭/১০০


হজরত ওমর (রা.) ছিলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা। উম্মতের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম তাকেই ‘আমিরুল মুমিনিন’ তথা মুমিনদের নেতা উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর পর তিনিই মুসলিম উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।


মুসলিম জাহানের এই মহান খলিফা মোট ১০ বছর পাঁচ মাস ২১ দিন খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তার খেলাফতকালেই সর্বাধিক অঞ্চল মুসলমানদের শাসনের অধীনে আসে, যার আয়তন ছিল ২৩ লাখ বর্গমাইলেরও বেশি, যা ছিল সেই সময় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। এ কারণেই তাকে বলা হতো অর্ধজাহানের খলিফা।

    জনপ্রিয়

    সর্বশেষ