তথ্যপ্রযুক্তি
24 Bangladesh
২১ জুলাই, ২০২৫ | 2:58 PM
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসা টেলিকম খাতে চলমান অনিয়ম এবং দূর্নীতির বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করতে প্লাকার্ড হাতে অবস্থান নিয়েছেন বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের ব্যানারে কয়েক জন তরুন।
সোমবার আগারগাও বিটিআরসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিটিআরসি এর বিভিন্ন অসংগতি এবং চলমান অনিয়ম এবং দূর্নীতি নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
লিখিত বক্তব্যে তারা,সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসা প্রতিবেদন তুলে ধরেন এবং অভিযোগ করেন যে সংবাদ মাধ্যমে অনিয়ম নিয়ে খবর আসা স্বত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বক্তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন,দেশের টেলিকম খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা BTRC-এর প্রত্যক্ষ জড়িততায় অন্তত ৭,৫০০ কোটি টাকার লুটপাট ঘটেছে বলে মিডিয়ায় উঠে এসেছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে IGW, IOF, এবং ICX নামের একাধিক ‘অপ্রয়োজনীয়’ স্তর তৈরি করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান BTCL-এর আয়ের উৎস ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে যমুনা টেলিভিশনের একটি রিপোর্টে প্রথম এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। সেখানে বলা হয়, IOF (IGW Operators Forum) নামক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল থেকে উপার্জিত বিপুল অর্থ ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলোর পকেটে যায়, যা BTRC ২০১৫ সালে অনুমোদন করে।
বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, এই সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্ত কিছু কোম্পানির মালিকানা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন:
• Ratul Telecom (৮৯.২৯ কোটি টাকা) — মালিক: জাহাঙ্গীর কবির নানক
• Kay Telecommunications (৭৮.২৭ কোটি) — মালিক: শামীম ওসমান
• Vision Tel, Bestec, Telex, SM Communication-এর মতো আরও অনেক কোম্পানি রয়েছে এই সিন্ডিকেটে।
এছাড়া, ২০২২ সালের একটি Daily Star প্রতিবেদনে জানা যায়, একটি IGW অপারেটরের বিরুদ্ধে ৪৬৩.৩৭ কোটি টাকার অর্থ পাচারের মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC)।
২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের একচেটিয়া দায়িত্ব ছিল BTCL-এর হাতে, যা রাষ্ট্রের জন্য একটি "সোনার খনি" ছিল। কিন্তু I GW কাঠামো চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই BTCL-এর বার্ষিক রাজস্ব কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৮০০–৯০০ কোটি টাকায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দুর্নীতির পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ১/১১ সামরিক-সমর্থিত সরকারের সময়। তখনই IGW ও সিন্ডিকেট কাঠামোর ভিত্তি তৈরি হয়। এই সময় রাজনীতি অনুপস্থিত থাকায় আমলারা পুরো কর্তৃত্ব গ্রহণ করে।
এছাড়া গত এক দশকে CAG, কালের কণ্ঠ, মানবজমিন ও সমকাল পত্রিকায় BTRC-এর বিরুদ্ধে অনিয়মের বহু প্রমাণ প্রকাশিত হয়েছে। অর্থ আত্মসাৎ, আইনের লঙ্ঘন এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশ্ন উঠেছে—একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা কীভাবে এই দুর্নীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিন্ডিকেট শুধু দেশের অর্থনীতি নয়, প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম বাজারকেও ধ্বংস করেছে। Qubee, RanksTel, Banglalion-এর মতো দেশীয় উদ্যোক্তারা হঠাৎ হারিয়ে গেছে, আর বাজার দখল করেছে কিছু প্রভাবশালী বিদেশি প্রতিষ্ঠান।
এই দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে BTRC-এর ভূমিকাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাষ্ট্রীয় টেলিকম খাতকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেট কীভাবে বছরের পর বছর ধরে অর্থ লুট করেছে, তা তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।