আন্তর্জাতিক
24 Bangladesh
৪ আগস্ট, ২০২৫ | 2:29 PM
মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন রাশিয়ার কাছাকাছি পাঠানোর ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এমন আক্রমণাত্মক অবস্থানে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনা। অনেকে একে দুই পরাশক্তির মধ্যে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
প্রথমে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা নীরব থাকলেও এবার মুখ খুলেছে রাশিয়া। পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সবাইকে “অত্যন্ত সতর্ক” হতে হবে বলে সতর্ক করেছে মস্কো।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে সোমবার এক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়, তারা ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো বিতর্কে জড়াতে চায় না।
এর আগে শুক্রবার ট্রাম্প জানান, তিনি মার্কিন নৌবাহিনীর দুটি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিনকে রাশিয়ার আরও কাছাকাছি মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ঠিক সে সময় থেকেই রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়ান ট্রাম্প।
ট্রাম্প সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে সময়সীমা দিয়েছেন মাত্র দুই সপ্তাহ। এর প্রতিক্রিয়ায় মেদভেদেভ ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেন ‘চূড়ান্ত আলটিমেটামের খেলা খেলার’ জন্য, যা সরাসরি যুদ্ধের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার শামিল। ট্রাম্প উত্তরে বলেন, মেদভেদেভ একজন ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি এখনো নিজেকে ক্ষমতায় ভাবেন এবং তিনি বিপজ্জনক পথের দিকে হাঁটছেন।
মেদভেদেভ পাল্টা এক পোস্টে সোভিয়েত আমলের ‘ডেড হ্যান্ড’ পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দেন, যা দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক হামলা চালানো সম্ভব।
এই অনলাইন বাকযুদ্ধ দুই চিরবৈরী পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
এই প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমরা মনে করি, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যে কোনো আলোচনা অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ বিষয়ে সবারই দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন সাবমেরিন মোতায়েনের বিষয়টি নতুন কিছু নয়, এগুলো আগে থেকেই প্রস্তুত অবস্থায় থাকে। এ নিয়ে আমরা বিতর্কে যেতে চাই না।’
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকি অনুযায়ী, রাশিয়া যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না করে, তবে রাশিয়া ও তার জ্বালানির প্রধান ক্রেতা- ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও যুদ্ধ ময়দানে রাশিয়ার অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ট্রাম্প নিজে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে রাশিয়ায় পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে পুতিনের সঙ্গে উইটকফের বৈঠক হলেও কোনো উল্লেখযোগ্য ফল আসেনি।
রুশ মুখপাত্র পেসকভ বলেন, ‘আমরা উইটকফকে মস্কোতে স্বাগত জানাই। তার সঙ্গে যোগাযোগকে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ বলেই মনে করি।’
উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প একাধিকবার বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ের মন্তব্যে পুতিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ট্রাম্প। এদিকে ইউক্রেনের শহরগুলোতে রাশিয়ার বোমা হামলা উত্তেজনায় নতুন পারদ যোগ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেদভেদেভের সঙ্গে ট্রাম্পের বিতণ্ডা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেটি পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের মতো গুরুতর ইস্যুতে গড়িয়েছে। তবে পেসকভ মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা এটিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির ইঙ্গিত হিসেবে দেখি না। তবে বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও আবেগপ্রবণ। এই বিষয়ে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।’
মেদভেদেভকে কূটনৈতিক সুরে কথা বলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে পেসকভ মন্তব্য এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘মূল বিষয় হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের অবস্থান।’
সূত্র : রয়টার্স