বৃহস্পতিবার, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / July 17, 2025
Logo
আজকের শিরোনাম:

অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুমকি সুইস বিনিয়োগকারীর

Picture of the author

24 Bangladesh

১৪ জুলাই, ২০২৫ | 6:31 AM

Picture of the author

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ হোল্ডিংস এজি ২০০৮ সালের একটি চুক্তি লঙ্ঘন এবং তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। কোম্পানিটি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান শেয়ারধারী, যা আগে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড (ওবিএল) নামে পরিচিত ছিল।

গত ৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ অভিযোগ করে যে, ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওবিএলের আর্থিক পুনর্গঠন ও পুঁজি পুনঃসরবরাহের জন্য আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ, ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড (ওবিএল) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘শেয়ার বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তির’ গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো মানতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চুক্তি অনুযায়ী, আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপকে নিশ্চিত করা হয়েছিল তারা যেসব শেয়ার ক্রয় করবে, সেগুলোর উপর কোনো ধরনের দাবি বা দায় থাকবে না। এই আশ্বাসের ভিত্তিতেই গ্রুপটি পুনর্গঠিত ব্যাংকে ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তবে গ্রুপটির দাবি, ওবিএলের সাবেক শেয়ারহোল্ডারদের দায়ের করা একাধিক মীমাংসাহীন আইনি জটিলতার কারণে তারা এখনো ব্যাংকের পূর্ণ মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি।

গ্রুপটির চেয়ারম্যান জোসেফিন শিভারেত্নাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে বাজেয়াপ্তকৃত শেয়ার বিক্রির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা এখনও বিচারাধীন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের একটি মামলায় হাইকোর্ট রায় দেন, বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গ্রুপটি তাদের শেয়ার বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবে না— ফলে কার্যত শেয়ার লেনদেন স্থবির হয়ে পড়ে।

গ্রুপটি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, যদি সাবেক শেয়ারহোল্ডাররা আদালতে জয়লাভ করে, তবে তারা ব্যাংকের প্রধান মালিকানার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে, যা আইসিবি গ্রুপের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিচারাধীন এই আইনি জটিলতাগুলো নিষ্পত্তিতে পর্যাপ্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পাশাপাশি, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল, তাও অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে তাদের একজন কর্মকর্তাকে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে।

আইসিবি গ্রুপ জানায়, এই অনিরাপদ ও অনিশ্চিত পরিবেশে কোনো বিনিয়োগকারী নতুন করে মূলধন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। একইসঙ্গে, শেয়ার হস্তান্তরের ওপর আদালতের চলমান নিষেধাজ্ঞাও সম্ভাব্য কৌশলগত অংশীদারদের নিরুৎসাহিত করছে।

চিঠির শেষাংশে গ্রুপটি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি এবং বিনিয়োগ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা ২০০৮ সালের চুক্তিকে বাতিল বলে গণ্য করবে।

সে ক্ষেত্রে গ্রুপটি তাদের ৩৫০ কোটি টাকার সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দাবি করবে। আর তা আদায়ে ব্যর্থ হলে, আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠির অনুলিপি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি এবং সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতিও হয়নি। তিনি আরও জানান, গ্রুপটির পাঠানো চিঠি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।


    জনপ্রিয়

    সর্বশেষ