Logo
বুধবার, ২৯ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / August 13, 2025
বুধবার, ২৯ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / August 13, 2025
আজকের শিরোনাম:

সারাদেশ

পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

Picture of the author

24 Bangladesh

১৩ আগস্ট, ২০২৫ | 9:59 AM

Picture of the author

ভারী বর্ষণ ও ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি প্রতিদিন বাড়ছে। 

বুধবার (১৩ আগস্ট) পদ্মার পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। এদিন গড়াই নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। দুই নদীর পানি বিপৎসীমার চেয়ে মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে।

এতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি উঠে গেছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীপারের বাসিন্দারা। চরাঞ্চলের ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গোখাদ্যের অভাবে গবাদিপশু নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চরের গরু-মহিষের বাথান ভেঙে গরু-মহিষ নিয়ে সবাই নিরাপদে চলে যাচ্ছেন।


কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা করছি। তাদের প্রয়োজন হলে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো৷ পানি আরও বাড়তে পারে। সেজন্য আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হয়েছে। আবাদি জমি ও রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। যদিও এখনো বসতবাড়িতে পানি ওঠেনি, তবু বন্যার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।


পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গড়াই নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।

চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চিলমারী ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নিচু এলাকায় বসবাসরত মানিকের চর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় তারা অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। ওইসব এলাকার উঠতি ফসল মরিচ, পাট ও ধান তলিয়ে গেছে। বহু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বাড়ির উঠানে পানি চলে এসেছে। গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গোখাদ্যের অভাবে গবাদিপশু নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।


এবিষয়ে চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে, চরের ধান, মরিচ ও পাট ডুবে গেছে। ঘরবাড়ি প্লাবিত না হলেও সবাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় ওইসব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। 

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, নদীর ওপারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। যার অধিকাংশই পানিবন্দী। ঘরবাড়িতে এখনও পানি ওঠেনি, তবে মাঠের আবাদি ফসল ডুবে গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, চরের দুই ইউনিয়নের ১৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শ্রেনি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়ে। বাকিগুলো সরেজমিনে দেখে, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। ১৩টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে৷ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে। 

পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুজ্জামান জাহিদ জানিয়েছেন, পদ্মা ও গড়াই নদীতে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। তবে তা কত দিন অব্যাহত থাকবে, তা বলা যাচ্ছে না। 



    জনপ্রিয়

    সর্বশেষ