সারাদেশ
24 Bangladesh
৭ আগস্ট, ২০২৫ | 7:30 AM
সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন আফসানা জাহান (১৯)। জন্মদিনে সহপাঠীরা তাঁকে খাওয়াবেন, আনন্দ করবেন—এ পরিকল্পনা ছিল আগে থেকেই। তাই সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে যান। সেখানে তাঁর জন্মদিন উদ্যাপন করেন সহপাঠীরা। নানা উপহার দেন তাঁকে। কিন্তু জন্মদিনের আনন্দ নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হয়েছেন।
মেয়ের জন্মদিনের কথা তুলে বিলাপ করছিলেন বাবা দেলোয়ার হোসেন। বলছিলেন, ‘হায়রে মা, খইয়া গেলে জন্মদিনে লগের তারা (সহপাঠীরা) খাওয়াইত, আনন্দ করত। এরপর তাড়াতাড়ি বাড়িত আইবে। এমন আনন্দ করলে আর বাড়িত আইলে নারে মা, কিলা সহ্য খরতাম...।’
আফসানা জাহান ওরফে খুশি গতকাল বুধবার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর সঙ্গে একই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন স্নেহা চক্রবর্তী (১৮) ও শফিকুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তি। এই দুজনও একই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্নেহা চক্রবর্তী বুধবার সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সুবিপ্রবি) ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। সকালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবা বিপুল চক্রবর্তী মেয়েকে নিজে ক্যাম্পাসে নিয়ে যান। এরপর তাঁকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি করে একটি অটোরিকশায় তুলে দেন। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে পথেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থেমে যায় স্নেহার। তাঁর গ্রামের বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হলেও সুনামগঞ্জ শহরে থাকতেন।
আফসানা জাহানের বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আরপিননগর এলাকায়। বাবা দেলোয়ার হোসেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। মা নুরুন্নাহান গৃহিণী। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে আফসানা ছোট। বড় মেয়ে নুশরাত জাহানের বিয়ে হয়েছে।
আফসানা জাহানের মামা সাইফুল আলম (ছদরুল) বলেন, আফসানা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। সুনামগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে লেখাপড়া করে গত বছর সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এবার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন। প্রতিদিন শহর থেকে অটোরিকশা কিংবা লেগুনায় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে সুনামগঞ্জ টেক্সস্টাইল ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস অবস্থিত। ওই প্রতিষ্ঠানেই সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে গত বছর থেকে পাঠদান শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই জেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের ওই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন।
গতকাল দুপুরে শান্তিগঞ্জ থেকে ফেরার পথে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেটগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় অটোরিকশার। সেখানেই তিনজন মারা যান। আহত হন আরও একজন ছাত্রী ও অটোরিকশার চালক।
সাইফুল ইসলাম জানান, আফসানা জাহানের লাশের পাশে তাঁর ব্যাগটি পড়ে ছিল। এটি বাড়িতে এনে খুলে দেখা যায়, ভেতরে জন্মদিনের অনেক উপহার। তাঁর ছবি যুক্ত করে সহপাঠীরা দিয়েছেন কোনোটি। ‘মেয়েটা অনেক মেধাবী ছিল। তাঁর আশা ছিল, পড়াশোনা করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে; কিন্তু মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল।’ বলছিলেন সাইফুল ইসলাম।
দুর্ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শেখ আবদুল লতিফ গতকাল বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি বলছিলেন, ‘সকালে একটি মেয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আরেকটি মেয়ে একই ক্যাম্পাসে পড়ত। তারা তো আমাদেরই মেয়ে। আমরা তো তাদের আর পাব না। তবে এর কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, আমরা সেটি দেখব।’
শেখ আবদুল লতিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সড়কে অনেক ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলে। অনেক চালক অদক্ষ। এসব কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিয়ে কঠোরভাবে দেখা উচিত।