লাইফস্টাইল
24 Bangladesh
৩০ জুলাই, ২০২৫ | 5:59 AM
আমরা যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, তাঁদের দিনের বড় একটি অংশ সহকর্মীদের সঙ্গেই কাটে। আসা–যাওয়া আর ঘুমের সময়টুকু বাদ দিলে দেখা যাবে, পরিবারের সদস্যদের চেয়ে তাঁদের সঙ্গেই কাটছে বেশি সময়। স্বাভাবিকভাবেই সহকর্মীদের সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়, তাঁরা হয়ে ওঠেন বন্ধু, মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গী। কখনো কখনো এই সম্পর্ক পেশাগত সীমারেখাও ছাড়িয়ে যায়।
প্রশ্ন হলো, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে এই সীমারেখা কোথায় টানতে হবে? অফিসে বা বাইরে বিপরীত লিঙ্গের সহকর্মীর সঙ্গে কোন কথাটা বলা যাবে, কোন ঠাট্টাটা করা যাবে, মোটের ওপর কতটা মেলামেশা করা যাবে?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে কোল্ডপ্লের কনসার্ট দেখতে গিয়ে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ক্যামেরায় ধরা পড়েন মার্কিন সফটওয়্যার সংস্থা অ্যাস্ট্রোনোমার প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি বায়রন ও সংস্থাটির এইচআর প্রধান ক্রিস্টিন ক্যাবট। যাঁদের দুজনেরই রয়েছে আলাদা পরিবার। তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অফিসের ক্ষেত্রে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যের সম্পর্ক নৈতিকতার কোন মানদণ্ড মেনে চলবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এসব নিয়েই মানবসম্পদবিষয়ক পেশাজীবী আরিফ শাহরিয়ারের সঙ্গে কথা হলো। দীর্ঘদিন দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। বর্তমানেও তিনি একটি বড় প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে বা নারী কর্মীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সে বিষয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার কোনো নিয়ম-নীতি আছে কি না।
জবাবে আরিফ শাহরিয়ার বলেন, একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই এসব বিষয়ে নির্দিষ্ট আচরণবিধি থাকতে হবে। সাধারণত এ নিয়ম বা আচরণবিধি তৈরি করে মানবসম্পদ বিভাগ। প্রতিষ্ঠান কী চায়, প্রতিষ্ঠান কেমন সংস্কৃতিতে চলবে, সেখানে কেমন কর্মপরিবেশ গড়ে তোলা হবে, তার সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি করা হয়।
সেই নিয়মের মধ্যেই থাকবে—আপনি আপনার সহকর্মীর সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলে তা কতটুকু হবে কিংবা নারী-পুরুষনির্বিশেষ সবার সঙ্গে আপনার আচরণ কেমন হবে। এমনকি এই আচরণবিধি মেনে না চললে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটিও স্পষ্ট করা থাকে।
এই মানবসম্পদ পেশাজীবী আরও বলেন, যখন কোনো পদের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হয়, তখন শুধু যে তাঁর দক্ষতা দেখা হয়, তা নয়; তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হবেন কি না, তাঁর মূল্যবোধ আর প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ মিলবে কি না, সে বিষয়েও খেয়াল রাখা হয়।
অর্থাৎ আপনাকে কর্মক্ষেত্রের নিয়ম মেনে চলতে হবে। ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো যেন ব্যক্তিগতই থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পর্ক অফিসকে বিপদে না ফেললে সেটি ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয়।
অনেক অফিসেই স্বামী-স্ত্রী বা ভাই-বোন কাজ করতে পারেন; কিন্তু তাঁদের মধ্যে রিপোর্টিং রিলেশন থাকে না। সাধারণত তাঁরা দুই বিভাগে বা দুই জায়গায় কাজ করেন। এটিও খেয়াল রাখতে হয় যে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেন কর্মক্ষেত্রে পেশাগত সম্পর্ককে ছাপিয়ে না যায়।
প্রত্যেককেই তাঁর নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। মোটকথা, প্রেম–বিয়ের সম্পর্কই হোক; আর আত্মীয়তা—তা যেন কর্মক্ষেত্র, পেশাদারত্ব বা দায়িত্বের মধ্যে বাধা সৃষ্টি না করে।
কোল্ডপ্লের কনসার্টে অ্যাস্ট্রোনোমার প্রসঙ্গ টেনেই জানতে চাই, ঊর্ধ্বতন কর্তা যদি তাঁর অধীন কোনো কর্মীকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন, অথবা যদি তাঁরা দুজনের সম্মতির ভিত্তিতেও সম্পর্কে জড়ান, সে ক্ষেত্রে তা জানার পর অফিসের কী ভূমিকা হবে?
এ প্রসঙ্গে আরিফ শাহরিয়ার বলেন—প্রথমত, যদি কোনো নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হন, তাহলে সেটির জন্য বেশির ভাগ ভালো প্রতিষ্ঠানে আলাদা নীতিমালা থাকে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমরা বলি, নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগ করতে। অভিযোগ দিলেই তখন মানবসম্পদ বা প্রশাসন বিভাগ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে।