Logo
বৃহস্পতিবার, ২৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / August 7, 2025
বৃহস্পতিবার, ২৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ / August 7, 2025
আজকের শিরোনাম:

মতামত

মায়ের চোখে বাংলাদেশ

Picture of the author

24 Bangladesh

৪ আগস্ট, ২০২৫ | 12:00 PM

Picture of the author

ভাদ্র মাসের আকাশ। ঋতু বদলের এ দেশে ষড়ঋতুর পালাবদল কারো মধ্যেই বিস্ময় তৈরি করে না। তবে ভাদ্র মাসের আকাশে এক ধরনের অস্থিরতা আছে যা কুয়াশার মতো এক জায়গায় স্থির থাকে না। গত বছরে বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, লালচে মেঘ। এই ধরনের লালচে মেঘে সাধারণত বৃষ্টি না হলেও, প্রকৃতির যুক্তি এড়িয়ে ঝুম বৃষ্টি হয়েছিল।


বিগত দেড় দশক ধরে থমকে যাওয়া ভাদ্র মাসের আকাশে সময়ের আতশিকাচের আয়নায় এখনও স্পষ্ট হয়ে আছে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাজপথে গড়ে ওঠা আন্দোলন, রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে ‘জুলাই বিপ্লবে’ শহীদদের গণকবর, পত্রিকার পাতায় মাসজুড়ে প্রকাশিত হওয়া ৪৬-এরও বেশি পরিচয়-নিষ্পত্তিহীন অজ্ঞাতনামাদের অপেক্ষায় থাকা শোকার্ত মায়ের একজোড়া চোখের স্থির হয়ে আসা দৃষ্টি।


জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তথ্যানুযায়ী, এক হাজার চারশ'রও বেশি ছাত্রজনতার শহিদী মৃত্যু নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যায় স্বৈরিণী শেখ হাসিনা। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথে ফেরার রাজনৈতিক বন্দোবস্তে একটি নির্ভরতা খুঁজছে বর্তমান বাংলাদেশ। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—স্বাধীনতা অর্জন ও স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধের মধ্যভাগে একটি মানবিক রাষ্ট্র-সমাজ গঠনের অবিচল যে প্রত্যয়, বিগত ৫৪ বছরের যাত্রাপথে আমাদের পরিচয় করিয়েছে এমন বাস্তবতার সামনে যেখানে দেশের মানুষের উত্থাপিত কিছু সাধারণ জিঞ্জাসা; 


  • আমরা কোথায় যাব?
  • কার কাছে যাব?
  • এখন আমাদের কী হবে?


রাষ্ট্র তার দেশের নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে। কিন্তু ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাদে খেলা করা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাষ্ট্রীয় বুলেটে নিথর হয়ে লুটিয়ে পড়া শিশু রিয়া গোপের শৈশব, চার বছরের শিশু আব্দুল আহাদের রক্তাক্ত জামা জড়িয়ে নিঃশব্দে মায়ের গোঙানির শব্দ কি রাষ্ট্রে উপলব্ধি করে?


যে রাষ্ট্র একটি শিশুর জন্মগ্রহণকে একটি সুন্দর পৃথিবীতে অফুরন্ত আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকাটাকে কঠিন করে তোলে, যে রাষ্ট্র শিশু, ছাত্র, যুবকের জীবনের সুন্দর স্বপ্নগুলোকে পূর্ণতা না দিয়ে জীবন কেড়ে নেয়, যে রাষ্ট্র গত ৫৪ বছরে একটি স্বাধীন দেশে ফ্যাসিবাদী কায়দায় শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে শত সহস্র মায়ের আর্তনাদে মানবাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে—এর দায়ভার এ দেশের সে সকল রাজনীতিবিদদেরই। যারা শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রশ্নে জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশকে বিভৎস করে তুলেছিল।


এর শেষ কোথায়?


সন্তানের রক্তে রঞ্জিত যে রাজপথ, সে পথ মাড়িয়ে আগামীর বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান সন্তানহারা এই মায়েরা?


এমন প্রশ্নে যখনই সামনে উত্থাপিত হয় একজন নিষিদ্ধ রাজনৈতিকের কথা, স্মরণ করছি এর উত্তরে—বিগত ১৬ বছর নির্বাসিত জীবনে থাকা একজন ব্যক্তিমানুষ। সম্প্রতি একটি বক্তব্যে শহীদদের কাঙ্ক্ষিত একটি ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর যে সংকল্প এবং একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া দরকার, তেমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে সিজোফ্রেনিয়া ব্যাধিতে আক্রান্ত রাজনৈতিক নেতাদের মানসিক ব্যাধির বিপরীতে যে সাবলীল অভিব্যক্তি—একজন ব্যক্তি তারেক রহমানকে সেইসব শহীদের মায়েদের স্বপ্নের সাথে একীভূত করেছে।


গত ৩১ জুলাই লন্ডন থেকে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেন—“একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া দরকার, তেমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” দেশে যাতে আর কোনোভাবেই কোনোদিন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, একই সাথে এ ব্যাপারে নারী সমাজকে অত্যন্ত সচেতন এবং সজাগ থাকার আহ্বানও জানান।


নিঃসন্দেহে এই বক্তব্যটি একজন মায়ের দৃষ্টিতে প্রতিটি সন্তানের নিরাপত্তা ও মর্যাদার আকাঙ্ক্ষা, রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে দীর্ঘদিনের অবিচার ও দমননীতির বিরুদ্ধে একজন রাজনৈতিকের এক দায়শুদ্ধ উচ্চারণ। আর সাধারণ মানুষের কাছে এটি হয়ে ওঠে আশা ও অন্তর্দাহ মিশ্রিত এক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। রাষ্ট্রের বিদ্যমান বিধিবদ্ধ ব্যবস্থার বিপরীতে এক সুসংহত প্রতিবাদ এবং সবার আগে বাংলাদেশকে প্রাধান্য দিয়ে একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প, যেখানে শাসন নয়, সেবাই হয়ে উঠবে রাষ্ট্রচর্চার মূলমন্ত্র।


তারেক রহমানের উচ্চারণ—“একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া দরকার, তেমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই”—শুধু এক রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং সন্তানের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ পেরিয়ে মায়ের চোখে দেখা এক ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি। বিগত বছরগুলোতে ফ্যাসিবাদের অনুগত আদালত ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে তার বক্তব্য, বিবৃতি দেশের গণমাধ্যমে নিষিদ্ধ করেছিল। নিষিদ্ধ সময়ের বিপরীতে, ভৌগোলিক দূরত্ব ও সময়ের ব্যবধানকে এড়িয়ে নিজের রাষ্ট্রচিন্তার বহিঃপ্রকাশ, রাষ্ট্র-সংস্কারের ভাবনা, রাজনৈতিক অপ্রাসঙ্গিক টানাপোড়েনের বিপরীতে সেইসব সন্তানহারা মায়েদের কাছে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনের নিজের দৃঢ় সংকল্প—অভিপ্রায়ের সে সম্ভাবনা ও স্বপ্ন পৌঁছে দিয়েছেন সফলভাবে।


এটি এমন এক প্রতিশ্রুতি যেখানে শব্দ ও স্বপ্ন মিলেমিশে এক নতুন ভোরের আহ্বান জানায়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়, তারেক রহমানের উপস্থিতি আজ শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতার নয়; বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশে ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের নির্ভরযোগ্য প্রতীক। সন্তানহারা মায়েরা আজ তাঁকে দেখেন এক ন্যায়ভিত্তিক পুনর্জাগরণের প্রতিশ্রুতি হিসেবে।



লেখক

গাজী সাইফুল 













    জনপ্রিয়

    সর্বশেষ