লাইফস্টাইল
24 Bangladesh
২৭ জুলাই, ২০২৫ | 7:35 AM
মায়ের সঙ্গেই বেশির ভাগ সন্তানের আহ্লাদ, আবদার আর অভিমানের সম্পর্ক। তাই কখনো কখনো মায়ের সঙ্গে রাগও বেশি দেখায় সন্তানেরা। তবে কিছু শিশুর বেলাও দেখা যায়, পরিবারের অন্যদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলেও মায়ের সঙ্গে জেদ করছে, অবাধ্য হয়ে পড়ছে। কেন এমন করে?
মায়ের সঙ্গে এই আবেগের প্রকাশ কি অস্বাভাবিক১. প্রথমত, গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো ‘অ্যাটাচমেন্ট’। শিশুর জন্মের পর থেকে তার প্রাথমিক পরিচর্যাকারীর (সাধারণত মা-ই হন, তবে বাবা, দাদি, নানি বা অন্য কেউ হতে পারেন) সঙ্গে মানসিক ও আবেগময় সংযুক্তি গঠিত হয়। সেই হিসেবে মা-ই হন তার নিরাপত্তার কেন্দ্রস্থল। কারণ, মায়ের মাধ্যমেই তাদের খাবার, ঘুম, যত্ন নিশ্চিত হয়। তাই তারা মায়ের গন্ধ শুঁকে, মাকে দেখে নিরাপদ অনুভব করে। মাকে না দেখলে চিৎকার–চেঁচামেচি করে।
২. শিশুরা তাদের মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে রাগ দেখাতে পারে, আবেগ প্রকাশ করতে এবং তাদের স্বাধীনতা জাহির করতে শেখে। রাগ একটা স্বাভাবিক আবেগ। কখনো মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও শিশুরা রাগ, জেদ দেখাতে পারে।
৩. বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়, বিশেষত শিশু থেকে কিশোর বয়সে পা রাখা সন্তানেরা মতামত প্রকাশ, নিজের স্বাধীনতাবোধ, নিজস্বতা, মনোযোগ আকর্ষণসহ বিভিন্ন কারণে মায়ের অবাধ্য হতে পারে। কারণ, তাদের অবচেতন মন জানে, মা-ই তাদের নিরাপদ আশ্রয়, মায়ের কাছেই আবদার-অনুযোগ করা যায়।
৪. এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, ওপরের কারণ ছাড়াও কিছু মানসিক সমস্যা, যেমন অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভ ডিজঅর্ডার, অপজিশনাল ডেফিয়েন্ট ডিজঅর্ডার, ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার কারণেও শিশু-কিশোরেরা মা, অর্থাৎ পরিবারের সদস্যের সঙ্গে রাগারাগি, বেয়াদবি কিংবা অবাধ্য আচরণ করতে পারে। এসব বিষয় ছাড়া প্যারেন্টিং সমস্যা, যেমন পারমিসিভ প্যারেন্টিং এবং অথরিটারিয়ান বা নেগলেক্টিং প্যারেন্টিং, টক্সিক পারিবারিক পরিবেশ ইত্যাদি কারণেও আচরণের পরিবর্তন বা সমস্যা হতে পারে।
একটা শিশুকে জন্ম থেকে তিল তিল করে বড় করে তোলা নিঃসন্দেহে কঠিন ব্যাপার। বড় হতে শুধু পর্যাপ্ত খাবার, ভালো স্কুল, আর মা–বাবার আদর দরকার—ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। একটা শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য ওপরের বিষয়গুলো তো থাকবেই, সঙ্গে সঠিক প্যারেন্টিং, পারিবারিক পরিবেশ, পারিবারিক নিয়ম–শৃঙ্খলার প্রয়োগ, মা-বাবার সম্পর্ক—সবকিছুই নির্ভর করে।
তাই আপনার সন্তানের আচরণের পরিবর্তন খেয়াল করলে, তাকে মারধর বা অতিশাসন করবেন না কিংবা ‘বাচ্চারা একটু অমন করেই’ বলে ছেড়ে দেবেন না; বরং তাদের সঙ্গে কথা বলুন, জানার চেষ্টা করুন, কেন তারা এমন করছে। ভুল করলে স্নেহ আর ধৈর্যসহ তাকে সাহায্য করুন। নিজেদের কোনো ভুল থাকলে শোধরানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ডা. রেজওয়ানা হাবীব, সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট