সারাদেশ
24 Bangladesh
১২ আগস্ট, ২০২৫ | 9:41 AM
খুলনায় ১৫ আগস্ট ঘিরে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। শহরের অদূরে খালিশপুর থেকে শুরু করে ফুলবাড়িগেট এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছে দলটি। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে এ কাজ করলেও জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
গত ৯ আগস্ট দিনগত রাতের কোনো একসময় আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার পক্ষে এসব পোস্টারিং করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পোস্টারিং করার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা।
জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পলায়নের পর সারাদেশের মতো খুলনায়ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে অভ্যুত্থানে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার হন। অনেকে সুযোগ বুঝে দেশ ছেড়েছেন। সেখান থেকে অর্থায়ন করেই সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ৯ আগস্ট দিনগত রাতের কোনো একসময় খালিশপুর বানৌজা তিতুমীর মেইন গেটের আনুমানিক ৩০০ মিটার পশ্চিম দিকে ২ নম্বর নেভিগেটসহ খালিশপুর থানাধীন বিভিন্ন জায়গায় সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ও দেওয়ালে আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার লাগানো হয়। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এই পোস্টারগুলো কে বা কারা লাগিয়েছে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিষয়টি অনুসন্ধানের পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাতের আঁধারে দূর থেকে লোক এনে এসব পোস্টার লাগানো হয়েছে। এর পেছনে বড় অর্থায়ন করছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকটি চক্র। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের মালিক মাহাবুবুর রহমান। মাহাবুবুর রহমান আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ঠিকাদারি কাজে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। রাতের আঁধারে খুলনার বাইরে থেকে পোস্টার ছাপিয়ে এনে বিভিন্ন দেওয়ালে তা লাগাচ্ছে মাহাবুব ব্রাদার্সের লোকজন। এছাড়াও কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অরাজকতা তৈরিতে টাকা লেনদেন করছে তারা।
খালিশপুরের বাসিন্দা হানিফ শিকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পোস্টার লাগানোর পর বিক্ষুব্ধ জনতা তা ছিঁড়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ রাতের আঁধারে পোস্টারিং করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে আওয়ামী লীগের এ দেশের মাটিতে দাঁড়ানোর মতো সাহস ছিল না। এজন্য চোরের মতো পোস্টার লাগিয়েছে। আন্দোলনে নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। স্বৈরাচারের বিচার কোনো না কোনো দিন এ দেশের মাটিতেই হবে।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাজাহারুল ইসলাম রাসেল বলেন, আওয়ামী লীগ যে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত তা পোস্টারিং দেখে বোঝা যাচ্ছে। রাতের আঁধারে তারা পোস্টারিং করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের আইন, গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার জন্য চরম হুমকি।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকলে এ ধরনের সাহস আওয়ামী লীগ করতে পারত না। এ ধরনের কাজে অর্থ যোগানদাতা ও কুচক্রীদের অবিলম্বে আইনের আওয়াতায় আনতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা শাখার সাবেক সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও নিষিদ্ধ সংগঠনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খারাপ, তা এরই মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ এখন হতাশ।
তিনি আরও বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া পোস্টারিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।